একটি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটেনে হিন্দু কট্টরপন্থীরা মুসলিম বিদ্বেষের ভিত্তিতে কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীর সাথে মিত্রতা গড়ে তুলছে। ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল (NPCC) দ্বারা সংকলিত এ প্রতিবেদনটি ডেইলি মেইল-এর মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘হিন্দুত্ব’ মতাদর্শে বিশ্বাসী কিছু চরমপন্থী ব্রিটিশ হিন্দু টমি রবিনসনের মতো কুখ্যাত কট্টর ডানপন্থী কর্মীদের সাথে সহযোগিতায় লিপ্ত। টমি রবিনসন, যার প্রকৃত নাম স্টিফেন ইয়্যাক্সলি-লেনন, ব্রিটিশ হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর সাথে বৈঠকে অংশ নিয়ে মুসলিমবিরোধী প্রচারণা ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই জোট গঠনে যুক্ত রয়েছে কিছু ব্রিটিশ হিন্দু ও ভারতীয় গণমাধ্যমেরও সমর্থন।
পুলিশ আশঙ্কা করছে, এই ধরনের চরমপন্থী ঐক্য সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাতে পারে, বিশেষ করে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে যে, এই চক্রটি ব্রিটিশ নির্বাচনী রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে চাইছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল, এবং অন্য দলগুলিকে ভোট না দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।
এছাড়াও, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, নরওয়ের সন্ত্রাসী আন্দ্রেস ব্রেইভিক তার মুসলিমবিদ্বেষী মতাদর্শের পেছনে হিন্দুত্ব থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। বলিউড সিনেমার মধ্যেও হিন্দুত্বের বর্ণনাকে উৎসাহিত করার অভিযোগ তুলেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি, যা ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের জন্য হুমকি বলে আখ্যা দেয়।
তবে, ব্রিটিশ হিন্দু সংগঠনগুলো এই প্রতিবেদনকে “ভিত্তিহীন” ও “ভ্রান্তিমূলক” বলে তীব্রভাবে নিন্দা করেছে।
INSIGHT UK নামক একটি হিন্দু প্রবাসী সংগঠনের মুখপাত্র জানান, “এই প্রতিবেদনে কোনো প্রমাণ নেই। এর মাধ্যমে পুরো হিন্দু সম্প্রদায়কে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করা হয়েছে, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
সংগঠনটি ঘোষণা দিয়েছে যে তারা প্রেস রেগুলেটর IPSO-র কাছে অভিযোগ দায়ের করবে এবং NPCC-র বিরুদ্ধে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় (FOI) আবেদন করবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে লেস্টারে মুসলিম ও হিন্দু তরুণদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল, যার ফলে বহু গ্রেফতার এবং কয়েকজনের কারাদণ্ড হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে, তবে হিন্দু সম্প্রদায় দাবি করে, এটি একপাক্ষিক মিথ্যা প্রচারণা, যা তাদের মধ্যে ভয় ও টার্গেটিংয়ের অনুভূতি তৈরি করেছে।
source & image : The Daily Mail